ইসলামি আদর্শের প্রতি বিদ্বেষ রেখে কোন দল ক্ষমতার চিন্তা করতে পারবে না: এএমএম বাহাউদ্দীন
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশ একটি প্রকৃত পরিকল্পিত ইসলামি রাস্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইসলামি আদর্শ ব্যতিরেকে সুশৃঙ্খল জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। আগামীদিনে এদেশ একটি শক্তিশালী আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী। এদেশের মানুষ ইসলাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়। ইসলামের প্রশ্নে দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। এদেশে অলি- আউলিয়াদের হাত ধরে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দিনে যারা সরকারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য চিন্তা করছেন তাদের বুঝতে হবে যে এদেশের ৯২ ভাগ মানুষ ইসলাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়। এই তৌহিদী জনতার পালস তাদেরকে বুঝতে হবে, ইসলামী বিদ্বেষ অথবা সেকুলারিজমের ঝাণ্ডা নিয়ে কেউ ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারবেনা।
ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন গতকাল (১৫ জানুয়ারি বুধবার) রাতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন, রইসুল কুররা ওযাল মুফাসসিরিন, শামসুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ)-এর ১৭ তম ঈসালে সওয়াব মাহফিলে বিশেষ বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ শহীদুল হক, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাতক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদাররিসিনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাও. শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী শাহান।
এএমএম বাহাউদ্দীন আরো বলেন, এদেশে রাজনীতিবিদরা সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ), শাহ পরান (রহ) ও আল্লামা ফুলতলী মাজার জিয়ারত করে প্রচারণা শুরু করেন। এই ফুলতলীর প্রভাব শুধু সিলেট নয়, পুরো বিশ্বে আছে এবং আমার মধ্যেও আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা দেন যাতে আমরা বেশী করে তাঁর নাম নিতে পারি। যার ঘরের কাছে আল্লাহর ওলীর ঘর আছে এবং যে খানে এগুলোর অনুশীলন হয় সেখানে রহমত বরকত আছে। আপনারা জানেন সিলেটে ভারত থেকে আসা নুড়ী পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলন করা নিষেধ ছিল। এখন সরকার সেটা তুলতে পারমিশন দিয়েছে। এগুলো আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের জন্য রহমত।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ)-এর স্মৃতিচারণ করে এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে আমার আব্বা মরহুম মাওলানা এমএ মান্নান (রহ)-এর কাছে আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলীর কথা আমাদের শুনাতেন। তিনি গুটি কয়েক মানুষের ভক্ত ছিলেন তার মধ্যে ছাহেব কিবলা ফুলতলী অন্যতম। তিনি ছোটবেলা তাঁর কথা আমাদের কাছে বলতেন। এরপর আমার নিজের দেখা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব সহ বড় বড় মন্ত্রীদের কাছ থেকে এত বড় মর্দে মুমিন দুঃসাহসী আল্লাহর ওলীর কথা আমি শুনে আসছি। বৃটিশ আমল থেকে উনার সংগ্রামী জীবনের অনেক কথা আমাদের শোনাতেন।আমার আব্বার সাথে পরবর্তিতে ঘটনা ক্রমে উনার সাথে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি যখন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক হলাম তখনকার প্রতাপশালী এরশাদ সরকার বাররি মসজিদ ভাঙ্গার নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনায় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা এক মাস বন্ধ ছিল, তখন সিলেট থেকে এরশাদ সরকারকে এর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন ছাহেব কিবলা ফুলতলী। তাছাড়া এরশাদ সাহেবকে ব্যাক্তিগতভাবে ধমকের সুরে ইনকিলাব খুলে দেওযার কথা বলেছিলেন। তারপর আল্লাহর হুকুমে এরশাদ সরকার ইনকিলাব খুলে দিতে বাধ্য হয়। আমিও পলাতক ছিলাম জামিন পাই।এরপরে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় যেটা নিয়ে আমরা সকলে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ একটি প্রকৃত পরিকল্পিত ইসলামি রাস্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে তার জন্য মরহুম পীর সাহেব ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম লং মার্চের নেতৃত্ব দেন। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে আমাদের বড় ছাহেব কিবলা যে বয়ান দিয়েছেন এবং উনি যে কাজটা করে যাচ্ছেন মানুষ তৈরি করার কাজ বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু এখন সব বাধা দূরীভূত হয়েছে।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিন বলেন, এরকম একটা সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মতো একটা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভিসি, প্রো ভিসি সহ আমরা সবাই ভাগ্যবান এরকম একটা আধ্যাতিক দরবারে হাজির হতে পেরে। এই আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারিগর হল এই দরবার। এই প্রতিষ্ঠানও একটা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়ার চেষ্ঠা চলছিল। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে যখন আমরা অনেকটাই দিকভ্রান্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন সকল ষড়যন্ত্র ও বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছেন তিনি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহ) । এখান থেকে এর প্রতিবাদে মিছিল মিটিং করে সিলেট থেকে ঢাকা অভিমুখে হাজার হাজার গাড়ীর বহর নিয়ে লংমার্চ করে হুংকার দিলেন, এবং আল্লাহর ওলীর দোয়া ও হুংকারে পরবর্তিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আজ দৃশ্যমান হলো। এটা আগামী দিনে ইসলামি সোসাইটি যে সুশৃঙ্খল জাতি গড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তাঁর ইন্তেকালের সামান্য আগে তিনি যাদের সাথে কথাবার্তা বলেন তার মধ্যে আমিও একজন। যবান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্তও তিনি ইসলামের কথাই ভেবেছেন। মোবাইলে সিলেট থেকে আমার বাবার সাথে যেরকম বলতেন, সেরকম আমাকেও বলেছেন, ‘বাহাউদ্দীন, তুমি কোনো চিন্তা করোনা। আল্লাহ তোমার সাথে আছেন। ইনশাআল্লাহ কেউই তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ সম্ভবত এই ছিল তার শেষ কথাগুলির একটি। এই দোয়া ও আশ্বাসবাণী আমাকে অবিশ্বাস্য শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। আমি তার প্রতি ও তাঁর পরিবারের সদল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম ফুলতলী দরবারের প্রসংশা করে বলেন, দেশ জাতি ও ইসলামের স্বার্থে যে কোনো দূর্যোগপূর্ন মুহুর্তে সবার আগে গর্জে উঠতে শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ। আমি বিশ্বাস করি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব যদি থাকতেন তাহলে ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গড়ে উঠা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিতেন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে প্রকৃত ইসলামের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে এই দরবারের কথা শুনে আসছি। ইসলামি সমাজ বিনির্মানে ও পবিত্র কুরআনের খেদমতের জন্য ফুলতলী ছাহেব বাড়ীর অবদান সবাই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে।
বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাও. শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) সারাজীবন পথহারা মানুষকে সটিক পথের দিশা দিয়েছেন। তিনি শুধু খনকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশ জাতি ও ইসলামের স্বার্থে আপোষহীন থেকে সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী বর্তমান পীর ছাহেব হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরীও অসহায় বনি আদমের খেদমতে বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছেন।
উল্লেখ্য, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ফুলতলী ছাহেব বাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ১৭তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। মাহফিলে মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী।
তিনি বলেন, দেশের অবস্থা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আকার ধারণ করে। আমরা দুআ করি যুলমকারী কেউ যেন আমাদের মাথার উপর না বসে। শয়তানী চরিত্রের কেউ যেন আমাদের কর্তৃত্বে না আসে। হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এমন কেউ যেন না আসে। কখনো কোনো পরিস্থিতির শিকার হলে আমরা যেন অবিচার না করি। আমরা যেন যালিম না হই, মজলুম না হই। আমরা যেন সর্বাবস্থায় ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কলাগাছ আন্দোলনের মতো এবারও ‘ধানের শীষ’কে উঠিয়ে আনতে হবে ঃ সাবেক এমপি ইন্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা
‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’
অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম
মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ
গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী
নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?
যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস
মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক
প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম
অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন
ময়মনসিংহে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের লটারি অনুষ্ঠিত